ইন্টারনেটের ক্রমবিকাশ:

ইতিহাস থেকে দেখা যায় যে ইন্টারনেট ধারণার উৎপত্তি আরপানেট (ARPANET) প্রকল্প থেকে। উল্লেখ্য, আরপানেট প্রকল্পের উদ্যোক্তা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স এর আওতাধীন এডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি বা সংক্ষেপে আরপা (ARPA Advanced Research Project Agency)। যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের এ উদ্যোগের পিছনে যে কারণ ছিল তাহলো, প্রতিকূল অবস্থাতেও যাতে নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারের তথ্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকে তা নিশ্চিত করা। এজন্য তারা প্রকল্পের মাধ্যমে তথ্যের ধারক এবং প্রসেসর যন্ত্র হিসেবে বিবেচিত কম্পিউটারসমূহকে নেটওয়ার্কভুক্ত করে। নিউক্লিয়ার যুদ্ধের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও যেন সামরিক, বেসামরিক অত্যাবশ্যক তথ্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট নির্বিঘ্নে পৌঁছানো যায় সেটি ছিল আরপা প্রকল্পের একটি অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।

আরপা প্রকল্পটি শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। তারপর অভাবনীয় সাফল্যের পর পরই এটি বৃহৎ আকৃতির নেটওয়ার্কে রূপ নেয়। বেশ কয়েক বছর আরপানেট প্রকল্পটি চালু ছিল, যদিও পরবর্তীতে আরপানেট প্রকল্প সরকারিভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। আরপানেট বিদায় নিলেও ইতোমধ্যে কম্পিউটার সংযুক্ত করার প্রযুক্তি ও কলা কৌশলের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। গুণগত দিক থেকে আবিষ্কৃত এসব প্রযুক্তি ছিলো যথেষ্ট বিশ্বস্ত এবং খরচ সাশ্রয়ী। আরপানেটের যোগ্য উত্তরসূরী যা গ্লোবাল তথ্য প্রযুক্তি ব্যাকবোন বা ভিত্তি তৈরি করেছে, সেটাই মূলত এখন ইন্টারনেট হিসেবে পরিচিত। এবার আরপানেটের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করা যাক।

এটিও পড়ুন – কর্মশিক্ষাকে বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করার কারণগুলি কী কী ? Why work-education is included in school level syllabus?

  • ১৯৬৮ সালে ২৫ ২৬ অক্টোবর প্রথম আরপানেট ওয়ার্কিআপ স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে মিলিত হয়।
  • মুল আরপানেট বিশেষ উদ্দেশ্যে নির্মিত কমিউনিকেশন কম্পিউটার আইএমপি (IMP-Interface Message Processors ) ব্যবহার করতো। আইএমপি কম্পিউটারগুলো প্রচলিত কম্পিউটার এবং আরপানেটেরর মধ্যে ইন্টারফেস হিসেবে কাজ করতো। আইএমপি কম্পিউটারের সূচনা হয় ১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯ তারিখে।
  • দুটি দূরবর্তী অবস্থানে রাখা আইএমপি কম্পিউটারের মধ্যে সর্বপ্রথম সংযোগ স্থাপন করা হয় ২১ নভেম্বর ১৯৬৯ সালে। আইনমপি-১ নামের কম্পিউটারটি ছিল পস্ এন্ডেলেস-এ, অন্যদিকে আইএমপি-২ নামের কম্পিউটারটি ছিল স্ট্যান্ডফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ক্যালিফোর্নিয়ায়।
  • ৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে পস্ এভেলেস মেনলো পার্ক সান্টা বারবারা এবং উত্তাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আইএমপি

কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সরকারিভাবে আরপানেট ঘোষণা করা হয়। প্রথমদিকে আরপানেট গবেষকদের উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি বৃহৎ আকারের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, যার মাধ্যমে অনেক দূরের অবস্থানের কম্পিউটারসমূহ সংযুক্ত করা যায়। কিন্তু সত্তুরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে দেখা গেল একটি মাত্র নেটওয়ার্ক প্রত্যেক ক্লায়েন্টের চাহিদা পূরণে সমর্থ নয়। এরপর গবেষকরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ মর্মে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এমন একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে হবে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কের সংযুক্ত করে একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক সিস্টেম গড়ে তোলা সম্ভবপর হয়। এই ধারণা থেকেই জন্য নেয় আজকের এই বহুল আলোচিত ইন্টারনেটওয়ার্ক (Internetwork) বা ইন্টারনেট (Internet)। এখনকার ইন্টারনেট প্রকৃতপক্ষে একটি একক বৃহত্তম কম্পিউটার নেটওয়ার্ক নয়, এটি মূলত: সারা বিশ্বময় বিস্তৃত হাজার কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি।

ইন্টারনেটের সংগঠন এবং এর গুরুত্ব বোঝার সুবিধার্থে একে আপনি সারা বিশ্বে বিদ্যমান অপর মু’টো কমিউনিকেশন সিস্টেমের সাথে তুলনা করতে পারেন। এ দু’টো কমিউনিকেশন সিস্টেমের একটি হলো পোস্টাল সিস্টেম (Postal System) এবং অপরটি টেলিফোন সিস্টেম (Telephone System)। বলা বাহুল্য, এ দু’টো সিস্টেমের প্রত্যেকটিই অনেকগুলো ছোট ছোট স্টেশনের সমন্বয়ে প্রথমে জাতীয় এবং পরে এই জাতীয় স্টেশনগুলো বৃহৎ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বা নেটওয়ার্কে রূপ নিয়েছে। এ দু’টো কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের তুলনায় ইন্টারনেটের বাড়তি সুবিধা হচ্ছে এর ব্যবহার বহুমুখী এবং এটি অনেক বেশি দ্রুততার সাথে সেবা প্রদান করতে পারে।

পোস্টাল বা টেলিফোন সিস্টেমের তুলনায় ইন্টারনেট যদিও নতুন, তারপরেও স্বল্প সময়ের মধ্যে ইন্টারনেট আমাদের সমাজ তথা অর্থনীতিতে একটি স্থায়ী অবস্থান করে নিয়েছে। বর্তমান পৃথিবী ইন্টারনেটের উপর এত বেশি নির্ভরশীল যে, এর ব্যবহার ছাড়া কোন কাজই যেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায় না। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর ইন্টারনেট নির্ভরশীলতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় অনেক গুণ বেশি।